গতকাল সোমবার রাতে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই নির্দেশ জারি করে বলেছে, পারস্পরিক সম্মান ও সুবিধার জন্য ভারতের সঙ্গে কথা বলতে চীন আগ্রহী। চীন আশা করে, ভারতও এই বিষয়ে কিছুটা এগোবে। চীনা সাংবাদিকদের ভিসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত ভারত বহাল রাখবে। দুই দেশের সাংবাদিক বিনিময়ে সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করবে।
ভারত ও চীনের সাংবাদিকেরা এত দিন ধরে দুই দেশেই কাজ করে আসছিলেন। সম্প্রতি দুই দেশেই কিছু জটিলতা দেখা দেয়। ২০২০ সালের জুনে পূর্ব লাদাখের গলওয়ানে দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে পারস্পরিক স্বাভাবিক সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়।
গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, চীনে কর্মরত ভারতীয় সাংবাদিকেরা স্থানীয় সাংবাদিকদের কাজে লাগানোর যে সুবিধা পেয়ে আসছিলেন, বেইজিং তা প্রত্যাহার করে নেয়। এমনকি ভারতীয় সাংবাদিকদের অবাধ চলাফেরার ওপরও বিধিনিষেধ আরোপ হতে থাকে। এক পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, চীন ঠিক করে দেয় কোনো ভারতীয় সংবাদমাধ্যম তার ব্যুরোয় তিনজনের বেশি চীনা সাংবাদিককে নিযুক্তি দিতে পারবে না। এবার জানিয়ে দেওয়া হলো, শেষ ভারতীয় সাংবাদিকের ভিসার মেয়াদ আর বাড়ানো হবে না।
ধারণা করা হচ্ছে, ভারতকে পাল্টা চাপ দিতে চীন এই উদ্যোগ নিল। বিষয়টা ইটের বদলে পাটকেল ছোড়ার মতো।
কিছুদিন আগে চীনের সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া ও সেন্ট্রাল টেলিভিশনের দুই সাংবাদিকের ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন ভারত অগ্রাহ্য করে। এর পাল্টা বেইজিংও সে দেশে কর্মরত চার সাংবাদিকের মধ্যে তিনজনের ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন প্রত্যাখ্যান করে। সেই তিনজনের মধ্যে দুজন সরকারি সংস্থার, অন্যজন ‘দ্য হিন্দু’ পত্রিকার। তিন সাংবাদিকদের ভিসা গত এপ্রিলে ‘ফ্রিজ’ করে দেওয়া হয়।
গত সপ্তাহে হিন্দুস্তান টাইমসের এক সাংবাদিক বেইজিং থেকে ভারতে ফিরে এসেছেন। সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের আরেক সাংবাদিক এখনো বেইজিং রয়েছেন। গতকাল তাঁকে চলতি মাসের মধ্যে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
চীনের অভিযোগ, তাদের সাংবাদিকদের প্রয়োজনীয় সুবিধা ভারত দিচ্ছে না। অসুবিধার মধ্যে তাঁদের কাজ করতে হচ্ছে। এই অভিযোগ অস্বীকার করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী বলেন, চীনসহ সব বিদেশি সাংবাদিক নির্বিঘ্নে ও নিরুপদ্রবে সাংবাদিকতা করে চলেছেন। কোনো রকম অসুবিধায় কাউকে পড়তে হচ্ছে না। উল্টো ভারতীয় সাংবাদিকদের চীনে অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে।
অরিন্দম বলেন, চীনে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাজে লাগাতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। চীনসহ অন্যান্য দেশের ব্যুরো সচ্ছন্দে ভারতে এই কাজ করতে পারে। অথচ চীনে ভারতীয় সাংবাদিকেরা তা পারছেন না। যাতায়াতেও আরোপিত হচ্ছে অনেক ধরনের বিধিনিষেধ।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিংয়ের দাবি, এই মুহূর্তে শুধু একজন চীনা সাংবাদিক ভারতে রয়েছেন। তিনিও তাঁর ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধির অপেক্ষায় দিন গুণছেন। মাও নিং চীনা সাংবাদিকদের প্রতি ভারতের ‘বৈষম্যমূলক’ আচরণের অভিযোগও এনেছেন।
মাও বলেন, ২০২০ সালের পর থেকে চীনা সাংবাদিকদের নতুন ভিসা ভারত দেয়নি। একটা সময় মোট ১৪ জন চীনা সাংবাদিক ভারতে কাজ করছিলেন। সংখ্যাটা এখন একজনে দাঁড়িয়েছে।
ভারত-চীন সম্পর্কের স্থিতিশীলতা নষ্ট হয় ২০২০ সালের গলওয়ান সংঘর্ষের পর। তিন বছর পর সীমান্ত পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক নয়। ভারতও বারবার জানিয়েছে, চীন যদি মনে করে সীমান্ত পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রেখে তারা সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে, তা হলে তারা ভুল করবে। পরিস্থিতি সংঘর্ষ–পূর্ববর্তী অবস্থায় না ফিরলে সম্পর্কও স্বাভাবিক হবে না।
ভারত অবশ্য সরকারিভাবে স্বীকার করে না ২০২০ সালের সংঘর্ষের পর ভারতের জমি চীন দখল করে রেখেছে। যদিও প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের অভিযোগ, চীন অন্তত এক হাজার বর্গ কিলোমিটার নতুন জমি জবরদস্তি দখল করে রেখেছে। সেই কারণেই সংঘর্ষ–পূর্ববর্তী অবস্থানে চীনের ফিরে যাওয়ার দাবিতে ভারত অনড়।
0 মন্তব্যসমূহ