রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকা
রাজধানীতে গড়ে উঠেছে ‘পকেটমার চক্র’, যার সদস্যরা নারী। এই চক্রের সদস্যসংখ্যা শতাধিক হতে পারে। তাঁরা মূলত বিপণিবিতান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, বাসস্ট্যান্ডের মতো জনসমাগম স্থানগুলোতে ঘুরে বেড়ান। নারীদের নিশানা করেন। ভিড়ের মধ্যে সুযোগ বুঝে নারীদের ব্যাগ থেকে মুঠোফোন, টাকা, স্বর্ণালংকার নিয়ে যান তাঁরা। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে এ তথ্য জানান।
ডিবির লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘কয়েকটি ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে আমরা ঢাকায় পকেটমার চক্রের খোঁজ পাই। ঢাকার দক্ষিণ এলাকায় এমন অন্তত ২৫ জন নারী পকেটমার রয়েছেন। পুরো ঢাকায় এই চক্রের সদস্যসংখ্যা এক শর বেশি হবে বলে ধারণা করছি। আমরা ইতিমধ্যে এই চক্রের কিছু সদস্যকে শনাক্ত করেছি।’
যেভাবে মিলল খোঁজ
গত ১৭ এপ্রিল রাজধানীর নিউমার্কেট থেকে ইডেন মহিলা কলেজের দিকে যাচ্ছিলেন এক নারী। একপর্যায়ে তিনি দেখতে পান, তাঁর ব্যাগে থাকা আইফোনটি নেই।
গত ২ মে সন্তানকে আনার জন্য ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আজিমপুর শাখায় যান এক নারী। তিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ফটকে অন্য অভিভাবকদের সঙ্গে অপেক্ষায় ছিলেন। হঠাৎ তিনি খেয়াল করেন, তাঁর ব্যাগের জিপার খোলা। ব্যাগে হাত দিয়ে দেখেন, তাঁর মুঠোফোনটি নেই।
চুরি হওয়া মুঠোফোন দুটি পরে উদ্ধার করে ডিবির লালবাগ বিভাগ। এই দুই ঘটনায় হওয়া মামলা তদন্ত করতে গিয়ে ঢাকায় পকেটমার চক্রের তথ্য জানতে পারে ডিবির লালবাগ বিভাগ।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট ডিবি সূত্র প্রথম আলোকে জানায়, ঢাকায় নারী সদস্য রয়েছেন এমন কয়েকটি পকেটমার চক্র সক্রিয়। প্রতিটি চক্রের সদস্য দুই থেকে পাঁচজন নারী।
ডিবির লালবাগ বিভাগ এই চক্রের ১৪ সদস্যকে ইতিমধ্যে শনাক্ত করেছে। চক্রের সদস্যরা সাধারণত বোরকা পরে বিপণিবিতান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, বাসস্ট্যান্ডে ঘুরে বেড়ান। সুযোগ বুঝে নারীদের ব্যাগ থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যান। এসব সামগ্রী তাঁরা কিছু নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে বিক্রি করেন।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট ডিবি কর্মকর্তাদের ধারণা, পকেটমার চক্রের সদস্যরা নারী হলেও তাদের পেছনে কেউ রয়েছে। তাঁদের কাছে থেকে যাঁরা মূল্যবান জিনিসপত্র কেনেন, তেমন একাধিক ব্যক্তিকেও শনাক্ত করা হয়েছে।
যেসব এলাকায় সক্রিয়
ডিবির তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকার অনেক নারী অভিভাবক তাঁদের সন্তানদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আনা-নেওয়া করেন। তাঁদের নিশানা করেন নারী পকেটমার চক্রের সদস্যরা। তাঁরা ক্লাস শুরু ও ছুটির সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে অবস্থান নেন। ভিড়ের মধ্যে তাঁরা নারী অভিভাবকদের ব্যাগ থেকে মুঠোফোন, টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে সটকে পড়েন।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজসহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এলাকায় এই চক্রের তৎপরতার তথ্য পেয়েছে ডিবির লালবাগ বিভাগ।
ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল, অভিজাত বিপণিবিতান ও ব্যস্ত বাসস্ট্যান্ডগুলোতে এই চক্রের সদস্যেরা সক্রিয় আছেন বলে ডিবি জানতে পেরেছে। ডিবি কর্মকর্তারা বলেন, নিউমার্কেট, গাউছিয়া, চাঁদনী চক, বসুন্ধরা সিটিসহ বিভিন্ন বিপণিবিতান এলাকায় পকেটমার চক্র সক্রিয়।
ডিবির কর্মকর্তারা বলেন, এলাকা ভাগ করে কাজ করেন চক্রের সদস্যরা। নিউমার্কেট, আজিমপুর ও বকশিবাজার এলাকায় যে চক্রটি সক্রিয়, তার সদস্য পাঁচজন। তাঁদের মধ্যে তিনজন পকেটমারিতে অংশ নেন। বাকি দুজন জিনিসপত্র সংরক্ষণ ও বিক্রি করেন। তাঁরা দিনে দুই থেকে পাঁচজনের পকেট মারেন।
যে কৌশলে পকেটমারি
ডিবি সূত্রের ভাষ্য, চক্রের সদস্যদের সঙ্গে কখনো কখনো ছোট শিশু থাকে। এর ফলে তাঁদের ব্যাপারে কারও সন্দেহ জাগে না। তাঁরা জনসমাগমস্থলে ঢুকে নিশানা ঠিক করেন। চোখের পলকে ব্যাগের জিপার খুলে মুঠোফোন, নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার নিয়ে নেন।
ডিবির কর্মকর্তারা বলেন, চক্রের এমন দুজন সদস্যকে শনাক্ত করা হয়েছে, যাঁরা সম্পর্কে ননদ-ভাবি।
চক্রের অনেক সদস্য ঢাকায় থাকেন বলে জানান ডিবির কর্মকর্তারা। তাঁরা আরও বলেন, কেউ কেউ থাকেন ঢাকার উপকণ্ঠে। তাঁরা সকালে ঢাকায় আসেন। দিনভর পকেট মারার চেষ্টায় থাকেন। পকেটমারি থেকে যা পান, তা বিক্রি করে আবার বাড়িতে ফিরে যান।
ডিবির লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, চক্রের সদস্যদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।
0 মন্তব্যসমূহ